অরওয়েলের কর্তৃত্ববাদ বিরোধী রচনার অন্তরালের অবচেতন কর্তৃত্ববাদ



মানুষ চিরকাল নিজেকে প্রকাশ করে রুচিতে, বক্তব্যে, আচরণে। চেতনে বা অবচেতনে।নিয়মিত পাঠক হিসেবে জানি, লেখকরাও মানুষ বলেই (যদিও প্রায় নিরানব্বই জন লেখকই নিজেকে মহামানব ভাবতে ভালবাসেন) অন্যকে আবিষ্কারের যাত্রায় প্রায়শই না বলেও স্বীকার করেন নিজের ত্রুটিগুলো বা হয়তো বলা উচিত দুর্বলতাগুলো।

আমরা একটু বেশি কৌতুহলী হলে, একটু বেশি মনোযোগী হলে লেখকের লেখায় ঠিকঠাক খুঁজে নিতে পারি লেখকের দুর্বলতা অথবা একটু দুঃসাহসী হয়ে বলা চলে- লেখকের অবচেতন পক্ষপাতিত্ব।

জর্জ অরওয়েল তার ‘Literature and Totalitarianism’ নামক রচনায় কী করে বৃটিশ উপনিবেশের প্রতি পক্ষপাতিত্ব করেন, কেমন করে মহান বলে ঘোষণা করেন ইউরোপের সাহিত্যকে- এসব আমি আবিষ্কার করে বসি রচনাটির বাংলা অনুবাদ পড়ে। আমার জানামতে রচনাটি বাংলায় ‘সাহিত্য ও কর্তৃত্ববাদ’ নামে প্রথম অনুবাদ করেছেন শাহারিয়ার জিম। রচনাটির অনুবাদ পাঠান্তে এক অদ্ভুত তাড়না কাজ করে ভেতরে। তাড়নাটা আসে একটিমাত্র রচনা পাঠান্তে লেখককের মননের গতি-প্রকৃতি নিয়ে কিছু ভাবনা মুচকি হেসে মাথা তুলে দাঁড়ানোয় ।
সে যাক, প্রসঙ্গে ফিরে বলে ফেলা উচিত- জর্জ অরওয়েল পাঠের পূর্বে, বিশেষ করে উল্লিখিত রচনাটি পাঠের পূর্বে পাঠকের জেনে রাখা উচিত অরওয়েল ইংরেজ হিসেবে আভিজাত্যভিমান থেকে মুক্ত ছিলেন না। ইংরেজ আদর্শ ও লক্ষ্যের প্রতি ছিল তার বেশ প্রেম। রচনাটিতে তিনি কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র হিসেবে উল্লেখ করেন রাশিয়া, ইতালী, জার্মানীকে কিন্তু বৃটিশ উপনিবেশবাদকে বোধহয় কতৃত্ববাদীদের কাতারে রাখতেন না। অথবা রাখতেন কিন্তু আলোচ্য রচনায় সে আভাস নেই। এটাও তিনি অবশ্যই বলেন যে, কর্তৃত্ববাদ গুটিকয়েক দেশে সীমাবদ্ধ থাকবে না। ফলে আরো নিশ্চিত হই- এ রচনাটি লিখতে বসে বৃটিশ উপনিবেশিক শাসনকে কর্তৃত্ববাদী বলতে চাননি তিনি। প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, প্রবন্ধটির রচনাকাল ১৯৪১, সে হিসেবে বৃটিশ সাম্রাজ্য তখনো অস্তিত্বশীল এবং একই সাথে অস্তিত্ত্বশীল ছিল তার আধিপত্য ও সাম্রাজ্য বিস্তারের নগ্ন চেষ্টা। সে চেষ্টা কেন অরওয়েলের কাছে কর্তৃত্ববাদী মনে হয়নি সে ব্যাপারে যথেষ্ট ভাবনার অবকাশ আছে।
রচনাটি অরওয়েল শুরু করেন দারুণ বাস্তব মানবমন ও পারিপার্শ্বিক বাস্তবতার পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে। কিন্তু তিনি খুব জলদি পক্ষপাতদুষ্ট হয়ে পড়েন যখন ঘোষণা করে দেন-
‘‘আধুনিক ইউরোপের সমগ্র সাহিত্যকর্ম (আমি গত চারশো বছরের সাহিত্যকর্মের কথা বলছি), পুরোটাই এইরকম এক ইন্টেলেকচুয়াল সততার উপরে দাঁড় করানো...’’
গত চারশো বছরের ইউরোপীয় সাহিত্য ইন্টেলেকচুয়াল সততার উপরে দাঁড় করানো- এমন একপেশে বক্তব্য গ্রহণীয় নয়। কেননা লেখকের পক্ষে চারশো বছর পিছিয়ে গিয়ে সকলের সততা, আবার যা কী না বুদ্ধিবৃত্তিক, যাচাই করা সম্ভবপর নয়। এছাড়াও, এটা খুবই সম্ভব যে গত চারশো বছরের ইউরোপীয় সাহিত্য কোনো না কোনোভাবে ক্ষমতার বলয় দ্বারা প্রভাবিত এবং উদ্দেশ্য প্রণোদিত হতে পারে। আর বুদ্ধিবৃত্তিক সততা কথাটায় যদিও কিছু ফাঁকি আছে। বুদ্ধিবৃত্তিক সততা মানেই সার্বজনীন সততা নয়।
এটা মাথায় রেখেই বোধহয় অরওয়েল বলেন-
“অথবা শেক্সপিয়ারের এই ম্যাক্সিমের মত করেও বলতে পারেনঃ ‘নিজের সাথে সৎ থাকো ‘....”
নিজের সাথে সৎ থাকার মানেটা এমনও হতে পারে যে মানুষ যা পছন্দ করে রাখ-ঢাক না রেখে সেটা করে ফেলা এবং পছন্দনীয় রুচি ও মূল্যবোধের ওপর দৃঢ়ভাবে স্থির থাকা- সেটা ভুল হলেও, অন্যকে অসুবিধায় ফেললেও। আপনি যা ভাবেন তা যদি করেই চলেন তাহলে আপনি আসলে নিজের প্রতি সৎ থাকেন, এটুকু ঠিক আছে। কিন্তু এই নিজের প্রতি সততার মানে এ নয় যে অন্যের প্রতিও আপনি সৎ। নিজের প্রতি সৎ থাকাটাকে যদি একটি অবশ্যই পালনীয় নীতি ধরে নেন কেউ, তবে সাথে সাথে তার এটাও স্বীকার করা উচিত- এই নীতির সাথে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত হতে পারে স্বার্থপরতা, আত্মপ্রেম, পছন্দনীয় আদর্শ-মতবাদ-দর্শন নিয়ে বাড়াবাড়ি উচ্ছ্বাস। ইংরেজি সাহিত্যের সর্বকালের জনপ্রিয় সাহিত্যিক, নাট্যকার শেক্সপিয়ারকেই যদি বিচার করি তাহলে তার নিজের প্রতি সৎ থাকার বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে দাঁড়ায়। এটা বলা হয়ে থাকে শেক্সপিয়ারকে সার্বজনীন বলে প্রতিষ্ঠা করেছে আসলে বৃটিশ উপনিবেশবাদ। শেক্সপিয়ারও প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছেন ইংরেজরা সদয় এবং উন্নত। তাদের শাসন অসভ্যদের সভ্য করে তুলতে জরুরি। এটা আপনি The Tempest পাঠে পাবেন। এই রচনাটিতে বারবার ক্যালিবানকে বলা হতে থাকে বর্বর, বিপদজনক এমনকি ধর্ষকামীও বানিয়ে দেন তাকে শেক্সপিয়ার। অপরদিকে প্রসপারো প্রজ্ঞাবান, উন্নত, মার্জিত, সভ্য এবং দয়ালু! হাহ! এছাড়া, শেক্সপিয়ারকে তীব্র সমালোচনা করা হয় The Taming of the Shrew-এ চরম পুরুষবাদী মনোভাব প্রকাশের কারণে এবং The Merchant of Venice-এ ইহুদিদের প্রতি নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গীর কারণে।
অরওয়েল রচনার একখানে বলেন-
‘‘কর্তৃত্ববাদ শুধু আপনাকে প্রকাশ করা থেকেই বিরত রাখেনা, এমনকি এটা আপনার বিশেষভাবে চিন্তা করা থেকেও বিরত রাখে, এবং আপনি কী চিন্তা করবেন সেটাও নির্দিষ্ট করে দেয়, এটি আপনার জন্য একটি চিন্তার ফ্রেম তৈরী করে সেখানেই আবদ্ধ রাখে, এটি কিছু নির্দিষ্ট আচরণ প্রণালি তৈরী করে দিয়ে আপনার ইমোশনাল লাইফকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টায় রত হয়। এবং যতদূর সম্ভব কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র চায় তার নাগরিকদের বাইরের দুনিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখতে যার ফলে তারা কোনো মানদন্ডের সাথে তুলনায়ও যেতে পারেনা।’’
পড়ে আমি হাসি। কথাগুলো তার ক্ষেত্রেও কত সত্যি! তিনিও এক নির্দিষ্ট ফ্রেমে আবদ্ধ থেকে চিন্তা করতেন যার প্রভাবে তিনি রচনাটির একখানে বলেন-
‘‘ইতালির সাহিত্য এখন বিকলাঙ্গ, এবং জার্মানির বেলায় এটি প্রায় মৃত। নাৎসিরা বই পোড়ানোর স্বভাবের জন্য কুখ্যাত। এমনকি রাশিয়াতে যে সাহিত্য রেনেসাঁ আশা করা হয়েছিলো একদা সেটাও হয়নি, এবং রাশিয়ার সব থেকে সম্ভাবনাময় লেখকদেরও দেখা গেছে হয় আত্মহত্যা করতে কিংবা জেলখানায় হারিয়ে যেতে।’’
যৌক্তিকভাবে আপনি একটি দেশের সাহিত্যকে বিকলাঙ্গ বলতে পারেন না। হয়তো সে দেশে সাহিত্যে এমন কিছু ভাঙচুর চলছে যা আপনি ধরতে পারছেন না। আর নাৎসিরা বই পোড়ানোর জন্যে বিখ্যাত, তাই বলে জার্মানীর সাহিত্য মৃত সেটা কোন যুক্তিতে ধরে নেয়া যায়? আবার তিনি রাশিয়ার সাহিত্যকে কোনো লেখকের আত্মহত্যা বা জেলে যাওয়া দিয়ে বিচার করছেন- এটা ভীষণ দুঃখজনক। রাশিয়াতে তখন, বিশেষ করে আলোচ্য রচনাটির সমকালীন সময়ে বা তার কাছাকাছি সময়ে Maxim Gorky, Nikolay Ostrovsky, Alexander Fadeyev, Marina Tsvetaeva, Vladimir Nabokov প্রমুখ প্রভাবশালী লেখকেরা ছিলেন। গোর্কি রচনাটি লেখার পাঁচ--ছ বছর আগে মারা গেলেও তার প্রভাব ছিল। কিন্তু এসবের খোঁজ বোধহয় অরওয়েল রাখেন নি বা রাখলেও ইংরেজভাষীদের নির্ধারণ করা সাহিত্যের মানদন্ড বিচারের একটা নির্দিষ্ট ফ্রেমে আবদ্ধ ছিলেন বলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ লেখক বলে মনে করেন নি।

অরওয়েল যখন অন্যভাষার সাহিত্যের দুর্বলতা খুঁজছেন তখন সেইসময় বা তার আগের ইংরেজি সাহিত্যের গতিপ্রকৃতি একটু যাচাই করবো আমরা। ইংরেজরা, ইংরেজ ভাষীরা বুদ্ধিবৃত্তিক প্রভাব বিস্তারে অসামান্য দক্ষতা অর্জন করেছিল এবং এ কাজে তাদের ভাষা ও সাহিত্য অন্যতম প্রধান উপাদান ছিল। তারা জানতো সাম্রাজ্যবাদী চেতনাকে দৃঢ় করতে ভাষা ও সাহিত্য দারুণ এক হাতিয়ার। এই একটি জায়গায় অন্যরা, অন্য ভাষাভাষীরা যখন নিজেদের মতবাদ খোলামেলাভাবে সাহিত্যে ঢালতো সেখানে এরা কাজটা করতো বুদ্ধিবৃত্তিক উপায়ে (শেক্সপিয়ারের টেমপেস্ট, ডিফোর রবিনসন ক্রুসো ইত্যাদিকে উদাহরণ হিসেবে নিতে পারেন)। এইসব কারণে ইংরেজরা বাহ্যত সাহিত্যকে শৃঙ্খলিত করেনি। আবার একদম করেনি এটাও বলি কী করে? অনেক অনেক লেখক এবং বই ইংল্যান্ডে নিষিদ্ধ ছিল। নিষিদ্ধ বইগুলোর অনেকগুলোই অরওয়েলের সময়কালেও সুপরিচিত ছিল। ছোট্ট একটা তালিকা- Lady Chatterley’s Lover (১৯৬০ পর্যন্ত), Ulysses (১৯৩০ পর্যন্ত), Lolita (১৯৫৯ পর্যন্ত), The Well of Loneliness (প্রায় ১৯৪৯ পর্যন্ত), Fanny Hill (১৯৬৪ পর্যন্ত) ইত্যাদি।
কিছুটা উদার হতে চেয়ে অরওয়েল রচনাটির প্রায় শেষে এসে বলেন-
“আমি বিশ্বাস করি যে সাহিত্যের বেঁচে থাকার আশা আমরা ওইসব দেশেই করতে পারি যেসব দেশে উদারনীতি তার শেকড় গেঁড়ে বসেছে, পশ্চিম ইউরোপ, আমেরিকা, ভারত এবং চীন এসব দেশ।”
সামান্য ইতিহাস ও মনস্তত্ত্ব পাঠে অরওয়েলের উদারতার পেছনেও যে এক কর্তৃ্ত্ববাদ বা এক সংকীর্ণ তথা ফ্রেমবন্দী চিন্তা কাজ করে তা পরিষ্কার হয়ে যায়। পশ্চিম ইউরোপ এবং আমেরিকায় কেন তার মতে উদারনীতি বিদ্যমান এবং সাহিত্য সেখানেই কেন বেঁচে থাকবে তার পেছনে ভৌগোলিক এবং ভাষাগত পক্ষপাতিত্ব কারণ হিসেবে বিদ্যমান থাকলেও চীন, ভারতে কেন তার আস্থা ছিল? এই প্রশ্নের উত্তরে আপনি নিশ্চয়ই জানেন, ভারত তখনো ছিল বৃটিশদের অধীন এবং সবচেয়ে লাভজনক উপনিবেশ ছিল সেটা ইংরেজদের জন্যে তাই সেখানে সাহিত্যের বেঁচে যাবার আশাও তিনি সরলমনেই করেছেন। প্রভুসুলভ মন মানসিকতায় তার মনে হয়েছে ভারতে ইংরেজদের শাসন চলমান থাকায় সেখানে উদারনীতি শেঁকড় গেঁড়ে বসেছে। পাশাপাশি এটাও মাথায় রাখা যেতে পারে যে, দীর্ঘদিন ভারতে প্রভুদের প্রতিনিধি হিসেবে থাকার দরুন ভারতের প্রতি একটা প্রভুসুলভ মায়া তার জন্মে যাওয়াও অস্বাভাবিক নয়। নিজের জন্মস্থান হিসেবেও মায়াটা আসতে পারে। চীনের ব্যাপারটা তুলনামূলক জটিল। চীন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালীন মিত্রবাহিনীর অন্যতম শক্তি ছিল। সেকারণেই চীনের প্রতি পক্ষপাতিত্ব দেখিয়েছেন সম্ভবত। এর বাইরে চীনের প্রতি ইংরেজদের সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় বা আত্মিক কোনো আকর্ষণ ছিল না।
এখানে একটা বিষয় উল্লেখ করাটা জরুরি, যদি প্রবন্ধটি রচনার কাল ২২ জুন, ১৯৪১ এর পরে হত তবে আমার প্রবল ধারণা, চীন-ভারতের পাশাপাশি রাশিয়াকেও অরওয়েল অপার সাহিত্য সম্ভাবনার দেশ, সম্ভাবনায় উদারনীতির দেশ বলে স্বীকৃতি দিয়ে দিতেন। কিন্তু দুর্ভাগ্য, রচনাটি ১৯ জুন, ১৯৪১-এ প্রকাশিত হয়। ২২ জুন, ১৯৪১ তারিখটা গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, এইদিন জার্মানী স্টালিনকে চমকে দিয়ে রাশিয়া আক্রমণ করে। এর আগে ধারণা করা হচ্ছিল রাশিয়া জার্মানীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে নামবে না। অন্তত স্ট্যালিনের আচরণে কারোই মনে হয়নি যে তিনি জার্মানীর সাথে যুদ্ধে আগ্রহী।
তবে এটুকু নিশ্চিত যে, অরওয়েল আধুনিক মানুষের মৌলিক সমস্যায় হাত দিয়েছেন। শেষ করব এটা স্বীকার করেই যে, তিনি কিছু ক্ষেত্রে নিজের যুগ ছাড়িয়ে ভাবতে পারতেন এবং সেই ভাবনার ফলশ্রুতিতেই বোধহয় রচনাটিতে তিনি বলেন-
“কর্তৃত্ববাদের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, যদিও সে চিন্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে, কিন্তু চিন্তাকে একেবারে স্থায়ী করে দেয়না। তবে প্রশ্নাতীত মতবাদসমূহ প্রতিষ্ঠা করে এবং দিনের পর দিন সময় ও সুযোগ মত সেগুলোকে পরিবর্তন ও রূপান্তর করে। ক্ষমতা কেন্দ্রিক রাজনীতির স্বার্থেই এর দরকার কিছু পক্ষপাতী মতবাদ যেগুলোর মাধ্যমে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র তার নাগরিকদের চূড়ান্ত বশ্যতা আদায় করে। এটি নিজেকে অব্যর্থ এবং অভ্রান্ত হিসেবে ঘোষণা করে, পাশাপাশি বস্তুনিষ্ঠ সত্যের অস্তিত্বের ধারণাকেও আক্রমণ করে।”
এর মানে কিন্তু এ নয় যে, তিনি নিজে কর্তৃত্ববাদের প্রভাব বলয়ের বাইরে ছিলেন। দুঃখজনকভাবে আলোচ্য রচনাটিতে চিন্তা নিয়ন্ত্রণের মত কর্তৃত্ববাদ আমি স্পষ্ট দেখতে পাই। এই কর্তৃত্ববাদ অবশ্যই অবচেতন এবং ইংরেজ জাতির প্রতি, ইংরেজি ভাষাভাষীদের প্রতি, ভৌগোলিক অধিকারবলে প্রাপ্ত প্রতিবেশিদের (পশ্চিম ইউরোপ) প্রতি, কৌশলগত (রাজনৈতিক, কুটনৈতিক) মিত্রতার প্রতি প্রগাঢ় মমত্ববোধ থেকেই উৎসারিত ও বিকশিত।

বিঃদ্রঃ অরওয়েল আগাগোড়া ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছিলেন। ফলে, আমার বিশ্লেষণটি পড়ে কেউ যেন অরওয়েলকে ভুলভাবে বিচার না করেন। আলোচ্য রচনাটিতে শুধু অরওয়েলের একটি রচনা নিয়েই আলাপ করা হয়েছে। আর এটা এক মনস্তাত্ত্বিক বিশ্লেষণ। স্বাভাবিকভাবেই মানুষ নিজ পরিবেশ ও সংস্কৃতি দ্বারা প্রভাবিত এটাই এ রচনার মূল প্রতিপাদ্য। অরওয়েল ফ্যাসিবাদ বিরোধী ছিলেন, এটা যেমন সত্যি তেমনি এটাও সত্যি যে ইংরেজ আভিজাত্যে তার বিশ্বাস ছিল।

অরওয়েলের কর্তৃত্ববাদ বিরোধী রচনার অন্তরালের অবচেতন কর্তৃত্ববাদ
আখতার মাহমুদ
রাঙামাটি, বাংলাদেশ।

Comments