ইনফরমেশন ইজ রেসপন্সিবিলিটি

 


আমাদের শেখানো হয়, ইনফরমেশন ইজ পাওয়ার। কিন্তু তথ্য যতটা না শক্তি তারচেয়ে বেশি দায়িত্বের বিষয়। একটা বাড়তি তথ্য কারো কাছে থাকা মানে একটা বাড়তি দায়িত্ব কাঁধে এসে পড়া। কোনো তথ্য হাতে

আসা মাত্রই তা আমাদের আচরণ সিদ্ধান্ত এর সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। কিভাবে আমরা তথ্যটা ব্যবহার করব সেটা নিয়ে চিন্তা করা জরুরি। একটা ছোট তথ্যও বড় কোনো অঘটন ঘটাতে পারে অনেকটা বাটারফ্লাই ইফেক্টের মতোই।

হাতে থাকা কোনো জরুরি তথ্য থাকার অর্থতথ্যটা ব্যবহার করে হয়তো মানুষ লাভবান হবে বা কাউকে ক্ষতির মুখে ফেলতে পারবে, কারো উপকারও করতে পারবে.... যদি তথ্যটা এমন হয় যে কারো সম্মান জড়িত তথ্যের সাথে, তবে তথ্যটা গোপন করে যাওয়াই ভালো। ইসলামের শিক্ষাও এমন যে, কারো দোষ জানলে গোপন করে যেতে হয়। এমন কোনো তথ্য, যেটা হয়তো সত্যি কিন্তু সেটা অন্যকে জানালে কেবল বিশৃঙ্খলাই তৈরি হবে সেক্ষেত্রেও গোপন করে যাওয়াটা ভালো। এড়িয়ে যাওয়া ভালো।

আবার হতে পারে, যদি কোনো তথ্য এমন হয় যে তথ্যটা প্রকাশ পেলে কারো দোষ প্রকাশ হয়ে পড়বে ঠিকই কিন্তু এতে সাধারণ মানুষের উপকার হবে বা অনেকে বিপদ থেকে বেঁচে যাবে। এক্ষেত্রে তথ্যটা প্রকাশ করাই উত্তম। এভাবে খেয়াল করলে আমরা দেখি, হাতে কোনো তথ্য থাকার মানেই হচ্ছে তথ্যটা কিভাবে আমরা ব্যবহার করব সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া।

কিন্তু আসলে ঘটছে কী? সোশ্যাল মিডিয়ার শেয়ার বাটন টিপে আমরা ভালোর আগে খারাপটাই শেয়ার করি। আমি ব্যক্তিগতভাবে অনেকভাবে যাচাই করে দেখেছি, ইতিবাচক কোনো সংবাদ-তথ্যের চেয়ে নেতিবাচক সংবাদ বা তথ্য কয়েকগুণ বেশি শেয়ার হয়। তো শেয়ারের ফলে কেউ বিব্রত হচ্ছে কিনা বা কারো মানসিক শান্তি নষ্ট হচ্ছে কিনা এটা আমাদের ভাবার অবসর হচ্ছে না।

দেখা যায়, আচমকা অশালীন কিছু সামনে চলে এলো, কারণ কেউ অশালীন বস্তুতে আর্ট খুঁজে পেয়ে তা শেয়ার করেছে। যিনি এরকম কিছু শেয়ার করেন তিনি সোশ্যাল মিডিয়ায় ফ্রেন্ডলিস্টে এমন কাউকে কাউকে ঢুকিয়েছেন যারা হয়তো এসব খুব অপছন্দ করেন। বা জরুরি কোনো কারণে সোশ্যাল মিডিয়ায় ঢোকেন। তখন এমন কিছু সামনে চলে এলে কাজের মনোযোগ নষ্ট তো হয়ই বিরক্তি-ক্রোধও জমে মনে। আমার জানামতে এরকম অশালীন বিষয় আশয়ের কারণে বহু লোক ইমো ব্যবহার করা বাদ দিয়ে দিয়েছে। ফেসবুকেও অনেকেই স্ক্রল করেন ভয়ে ভয়ে এই বুঝি বিব্রতকর কিছু চলে এলো সামনে।

এছাড়া এমনও দেখি, কারো বেডরুমের কথা জেনে ফেলে কেউ একজন পোস্ট দিয়ে ফেলে আর সেটাও কয়েক ঘন্টায় হয়ে যায় হাজার হাজার শেয়ার। যারা শেয়ার করেন এসব তারা বোধহয় অন্যের অনুভূতিকে মাথায় রাখেন না কখনো। ভেবেও দেখে না কেউ, যার বেডরুমের কথা শেয়ার হচ্ছে তার প্রাইভেসি কোন অধিকারে নষ্ট করে মানুষ?

সবচেয়ে বিরক্তিকর হলো ধর্ম বিদ্বেষী সেক্যুলারদের বক্তব্য শেয়ার করা। দেশে বেশিরভাগ মানুষ ধর্মপ্রাণ। ধর্মের বিষয়ে খুব জলদি এদেশের মানুষকে রাগিয়ে তোলা সম্ভব। অদ্ভুতভাবে দেখা যাচ্ছে, যারা ধার্মিক তারেই ধর্ম বিদ্বেষীর বক্তব্য দিনরাত শেয়ার করতে থাকেন। এতে দিনশেষে কার লাভ হয়? নিজে ধার্মিক হয়ে ধর্মবিরোধীদের বক্তব্য আরো অনেক অনেক ধার্মিকদের মধ্যে শেয়ার করে একটা অশান্তি তৈরি করে মানুষ। ধর্মবিদ্বেষীদের ডানহাত হয়েই যেন কাজ করেন ধার্মিকরা। ধার্মিকদের কেনো ধর্মবিদ্বেষীর বক্তব্য শেয়ার করা প্রয়োজন? কেন এড়িয়ে না গিয়ে শেয়ার করা হয়? এ প্রশ্নগুলো নিয়ে ভাবা জরুরি।

আবার অতীতে কোনো সেক্স স্ক্যান্ডাল ঘটলে সেটাকে চেপে চুপে কবর দেয়া হতো কিন্তু এখন কোনো স্ক্যান্ডাল ঘটলে ছড়িয়ে মাখিয়ে রসিয়ে কী বিশ্রী কাণ্ড যে করা হয় তা বলার বাইরে। মানে এমন পরিস্থিতি তৈরি করা হয় যে কেউ কোনো একটা ঘটনা ভুল করে ঘটিয়ে ফেললে অনুতপ্ত হয়ে সুপথে ফিরে আসার পথ সোশ্যাল মিডিয়া ইউজাররা বেশ আগ্রহের সাথেই বন্ধ করে দিতে চান।

ব্যাপারটা অনেকটা এমন যে রাস্তায় হাঁটতে দিয়ে পায়ে মল লেগে যাওয়ায় সেটা না ধুয়ে বরং আরো লেপ্টে-ছড়িয়ে চিৎকার করে মানুষ জড়ো করে সবাইকে জানানোর ধুম পড়ে যায়- দেখ দেখ অন্যের মল লেগেছে লেগেছে আমার পায়ে!

অদ্ভুত মানসিকতা নিশ্চয় একটা রোগ। রোগের চিকিৎসা হতে পারে বুঝতে পারা যে হাতে কোনো তথ্য আসা মাত্রই ছড়াতে হয় না। কারণইনফরমেশন ইজ পাওয়ার এটা ভুল কথা। সঠিক কথাটা হলোইনফরমেশন ইজ রেসপন্সিবিলিটি

Comments