পাঠ অভিজ্ঞতার তিন স্তর




পাঠ অভিজ্ঞতা তিন স্তরে থাকতে পারে। ১) শৈশব (মুগ্ধতা), ২) যৌবন (প্রশ্ন) এবং ৩) পূর্ণতা (উপলব্দি)। 

যখন একটা বই পড়ে যেতে ভালো লাগে তখন পাঠকের অভিজ্ঞতা মুগ্ধতার শৈশব স্তরে থাকে, এই মুগ্ধতা কেটে না যাওয়া পর্যন্ত সাধারণত যা-ই সামনে আসে পাঠক তা-ই গ্রহণ করতে প্রস্তুত থাকে। যদি পাঠ অভিজ্ঞতা কেবল মুগ্ধতার স্তরেই থেকে যায় তবে সেই পাঠক আনন্দ নিয়েই পড়ে যান কিন্তু আটকে থাকেন পাঠঅভিজ্ঞতার শৈশবেই।

পাঠের শৈশাবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারলে পাঠঅভিজ্ঞতা যৌবনে পা দেয় এবং সতর্ক হয়ে ওঠে পাঠক। অল্প বিস্তর চ্যালেঞ্জ ছুঁড়তে থাকে সে পাঠের এবং লেখকের মননের বিপরীতে। তার প্রশ্ন তাকে উন্নততর নানান পাঠের দিকে নিয়ে যায়। তবে এই স্তরের পাঠক যদি প্রশ্ন ছুঁড়তেই কেবল আনন্দবোধ করেন কোনো উত্তর গ্রহণ না করেন বা উপলব্ধিতে পৌঁছাতে না চান, তার পাঠঅভিজ্ঞতা ক্রমেই প্রশ্নের চমকের ফাঁদেই আটকে থাকে আর তিনি ক্রমেই আনন্দহীন পাঠকে পরিণত হন।  

যেকোনো টেক্সটকে ঠিকঠাক প্রশ্ন করে সেই প্রশ্নের উত্তর নিজের বিরুদ্ধে গেলেও যখন পাঠক উপলব্ধিতে পৌঁছানোর চেষ্টা করেন দরদ নিয়ে তখনই পাঠক পাঠঅভিজ্ঞতার পরিণত অবস্থায় ঢুকে পরেন। পাঠঅভিজ্ঞতার এই স্তরে পাঠক কেবল মুগ্ধ হন না বা প্রশ্ন করেন না। যে কোনো লেখার অন্তর্নিহিত অর্থকেও ছুঁয়ে ফেলেন এবং ব্যাখ্যা করতে পারেন। এই স্তরে পৌঁছালে আবার পাঠক যে মুগ্ধ হতে ভুলে যান বা প্রশ্ন করেন না তা নয়। তিনি যে কোনো বই পাঠে একই সাথে পাঠ অভিজ্ঞতার এই তিন স্তরে ঘুরে বেড়াতে পারেন অনায়াসে।

অবশ্য আরো এক স্তরের পাঠক আছেন, যারা মূলত পান্ডিত্য প্রকাশে উদগ্রীব। আমি একে বলি পাঠঅভিজ্ঞতার রুগ্ন স্তর। এই স্তরের পাঠকের পাঠঅভিজ্ঞতার লক্ষ্যই নিজের পান্ডিত্য প্রকাশ। মূলত ফাঁপা উপলব্ধি নির্ভর এই স্তরের পাঠঅভিজ্ঞতা পান্ডিত্যের রুগ্নতায় আক্রান্ত কিন্তু চটকদার শব্দে ভরপুর।


Comments